পথ জানা নাই গল্পের মূলভাব

আজকে আমরা কথা বলবো শামসুদ্দীন আবুল কালামের পথ জানা নাই গল্পের মূলভাব নিয়ে গল্পে গ্রামীণ সভ্যতার ওপর শহুরে সভ্যতার আধিপত্যকামী অবস্থাকে তুলে ধরেছেন। তিনি দেখিয়েছেন একটি শান্ত  সজীবকে কিভাবে বিধ্বস্ত হয়ে নাগরিক জীবনের সাথে সম্পর্কিত হয়ে।

পথ জানা নাই গল্পের মূলভাব বিষয়বস্তু

গ্রাম বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের একটি গ্রামের নাম মাউলতলা। এই গ্রামের একজন দরিদ্র কৃষক গহুরালি। তার ছিল মাত্র পাঁচ কুড়া জমি। এই জমির আয় থেকেই একান্ত অভাব অনটনের মধ্যদিয়ে সে সংসারযাত্রা নির্বাহ করতো ইংরেজ শাসনের শেষদিকে ঐ গ্রামের জোনাবালি বাইরে থেকে কাঁচা টাকার মালিক হয়ে গ্রামে ফিরল। সে গ্রামবাসীকে এক নতুন জীবনের স্বপ্ন দেখাল। গ্রামের সাথে শহরের যােগাযােগ স্থাপনের জন্য সে একটা রাস্তা বানানাের পরিকল্পনা করল। গ্রামের স্বল্প জমির মালিকেরা এতে আপত্তি জানাল। কিন্তু জোনাবালি তাদেরকে এই যুক্তি দিয়ে রাজি করাল যে রাস্তার জন্য যেটুকু জমি তাদের নষ্ট হবে; এই রাস্তার উপর দিয়ে শহরের সাথে ব্যবসায় বাণিজ্য করে তার চেয়ে লাভ হবে বেশি।

পথ জানা নাই গল্পের মূলভাব বিষয়বস্তু

সকলে লাভ ও নতুন জীবনের আশায় রাস্তা তৈরির কাজে লেগে গেল। স্ত্রী হাজেরার আপত্তি সত্ত্বেও গহুরালি রাস্তার জন্য দুই কুড় জমি দিয়ে দিল। রাস্তা হয়ে গেল। গ্রামের মানুষ শহরে যেতে শুরু করল । গ্রামের নানান জিনিসপত্র শহরে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে কেউ কেউ কাঁচাপয়সা রােজগার করতে লাগল । গহুরালিও দু’পয়সা রোজগার করল। এর মধ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলাে। দুর্ভিক্ষ নেমে এল । তার ঢেউ মাউলতলার গায়ে এসে লাগল । শহর থেকে মিলিটারির দালাল এল গ্রামে। উচ্চাকাঙ্ক্ষার বশবর্তী হয়ে গহুরালি এই দালালের সাথে খাতির জমাল । একদিন দালালটি গহুরালির স্ত্রী হাজেরাকে নিয়ে পালাল। স্ত্রী হারিয়ে সে পাগল হয়ে গেল। এর জন্য সে দায়ী করল ঐ রাস্তাকে। একটা কোদাল দিয়ে সে রাস্তাটা কোপাতে শুরু করল। সকলে জিজ্ঞাসা করল, কর কী গহুরালি? গহুরালি উন্মত্তের মতাে বলল এ রাস্তা ঠিক হয়নি। যে রাস্তা সে চেয়েছিল তা এটা নয়।

আরো পড়ুনঃ রাজবন্দীর জবানবন্দী প্রবন্ধের মূলভাব

উপসংহার : উপযুক্ত আলােচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বণিক সভ্যতার কুফল মাউলতলা গ্রামটিকে তছনছ করে দিয়েছিল। এখানকার মানুষের নিস্তরঙ্গজীবনে এই সভ্যতা যে তরঙ্গ তুলেছিল তাতে গ্রামের লাভের চেয়ে ক্ষতি হয়েছিল বেশি। বণিক সভ্যতার নগ্নতা শান্তশিষ্ট স্নিগ্ধ গ্রামটিকে অস্থির করে তুলেছিল। এ গ্রামের মানুষের সুখশান্তিকে কেড়ে নিয়ে তাদেরকে বিপর্যস্ত করে ফেলেছিল।

এক নজরে পথ জানা নাই গল্পের বিশেষ কিছু প্রশ্ন উত্তর

প্রশ্নঃ পথ জানা নেই গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র কে?

উত্তরঃ গফুর আলী ওরফে গহুরালি, হাজেরা, জোনাবালি হাওলাদার।

প্রশ্নঃ পথ জানা নেই উপন্যাসটি কার লেখা?

উত্তরঃ শামসুদ্দীন আবুল কালাম (১৯২৬ – ১০ জানুয়ারি ১৯৯৭)

প্রশ্নঃ পথ জানা নাই ছোট গল্পে বর্ণিত গ্রামের নাম কি?

উত্তরঃ গ্রামবাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের একটি গ্রামের নাম “মাউলতলা”

Leave a Comment