বার বার ফিরে আসে কবিতার মূলভাব

আজকে আমরা কথা বলবো বার বার ফিরে আরে কবিতার মূলভাব নিয়ে। আপনি যদি অনলাইনে খোঁজ করেন তাহলে আপনি ঠিক নিবন্ধে এসেছেনাজকে আমাদের আলচনার বিষয় বার বার ফিরে আসে কবিতার মূলভাব বা মূল বিষয়বস্তু তাহলে চলুন শুরু করা যাক।

বার বার ফিরে আসে কবিতার মূলভাব

বার বার ফিরে আসে কবিতার মূলভাব বা মূল বিষয়বস্তু

প্রতিভাবান সাহিত্যিক শামসুর রাহমান বাংলাদেশের প্রধান কবি। তিনি ছিলেন রাজনীতি ও সমাজ সচেতন মানুষ। এদেশের প্রতিটি রাজনৈতিক আন্দোলন ও উত্থান-পতন তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন। প্রতিটি আন্দোলনের সাথে তার ছিল প্রত্যক্ষ ও পরােক্ষ যােগাযােগ। অত্যন্ত কাছে থেকে তিনি আন্দোলনসমূহ পর্যবেক্ষণ করেছেন। বার বার ফিরে আসে’ কবিতায় কবি কাব্যিক ভাষায় এদেশের রাজনৈতিক আন্দোলনকে চিত্রিত করেছেন। বারবার ফিরে আসে আন্দোলনের স্মৃতি। কবি কবিতা লিখতে গিয়ে স্মৃতি রােমন্থন করেছেন বাংলাদেশের অভ্যুত্থানের সাথে জড়িত ঘটনাবলির। তিনি বলেছেন- “বার বার ফিরে আসে রক্তাপুত শার্ট”- এই রক্তাপুত শার্ট উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের শহিদ অকুতােভয় আসাদের রক্তমাখা শার্ট। ১৯৬৯ সালে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলারবিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিল এদেশের মানুষ।

রাজবন্দী শেখ মুজিবুরের মুক্তির দাবিতে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছিল ২০ জানুয়ারি ১৯৬৯। এদিন মারমুখী জনতার আন্দোলনকে স্তব্ধ করার জন্য বর্বর পাকবাহিনী গুলি চালিয়েছিল জনতার মিছিলে । পুলিশের গুলিতে সেদিন নির্মমভাবে নিহত হয়েছিলেন আসাদ। কিন্তু জনতার আন্দোলন থামেনি। আসাদের রক্তমাখা শার্টকে পতাকা বানিয়ে জনতার সেই মিছিল আরাে বেগবান ও জঙ্গি হয়ে উঠেছিল। রক্তমাখা শার্ট দেখে লক্ষ লক্ষ মানুষ রাস্তায় নেমে এসে শরিক হয়েছিল আন্দোলনে। ২৪ জানুয়ারি সংঘটিত হলাে গণঅ্যুথান। স্বৈরাচার সরকার বাধ্য হয়েছিল পিছু হটতে । তারা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করে বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবকে মুক্তি দিয়েছিল। কিন্তু এখানেই শেষ হয়নি আন্দোলন। ১৯৫২ সালে ভাষার দাবিতে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল স্বৈরাচারী শাসকদের অপশাসনের কারণে তা দিন দিন নতুন মাত্রা পেয়েছিল। আর এ সকল স্বাধিকার আন্দোলনের প্রত্যেকটিতে অগণন মানুষকে ওরা হত্যা করেছিল । কবি তাই বলেছেন-

“আমাকেই হত্যা করে ওরা বায়ান্নোর রৌদ্রময় পথে”। এ সকল আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালে সংঘটিত হয় মুক্তিযুদ্ধ।”

ত্রিশ লক্ষ মানুষের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন হয় বাংলাদেশ নামের নতুন দেশ। এই স্বাধীনতা অর্জনের জন্য কত গৃহবধূকে যে বিধবা হতে হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। এ সকল আন্দোলন সফল করতে কত মা যে তার সন্তান হারিয়েছেন তার হিসাব নেই। স্বাধিকার আন্দোলনের এই সংগ্রামকে সার্থক করতে গিয়ে কত পিতার বুক যে খালি হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। গৃহবধূদের বৈধব্য, মায়েদের কান্না, পিতাদের হাহাকারের বিনিময়ে এদেশের প্রত্যেকটি স্বাধিকার আন্দোলন সফল হয়েছে । শক্ররা বার বার আমাদের গলাটিপে হত্যা করতে চেয়েছে। আর বার বার শহিদের রক্তাপ্লুত শার্ট পতাকা হয়ে আন্দোলনকারীদের অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। আমাদের স্বাধিকার আদায়ে আত্মােৎসর্গকারীদের জীবন বিসর্জনের স্মৃতিকে অম্লান করে রাখতে নির্মিত হয়েছে শহিদমিনার। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন আন্দোলনের জন্য আত্মত্যাগকারীদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে, আর তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন শহিদ মিনার। কবির প্রশ্ন-

“তবে কি আমার বাংলাদেশ শুধু এক সুবিশাল শহিদ মিনার হয়ে যাবে?” পরিশেষে বলা যায় যে, জনগণের স্বাধিকার আদায়ের”

আন্দোলনে যারা জীবন উৎসর্গ করে তারা পরবর্তী প্রজন্মের আন্দোলনের প্রেরণা হয়ে থাকে। তাদের ত্যাগের অনুপ্রেরণা বুকে নিয়ে জাতি অন্যায়ের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠে। শহিদের রক্তমাখা শার্ট হয়ে ওঠে সংগ্রামের বিজয়কেতন। এভাবেই যুগ থেকে যুগান্তরে আন্দোলনের বহ্নিশিখা আলাে ছড়িয়ে দেয়। শহিদদের স্মৃতি বার বার জ্বলজ্বল করে জ্বলে ওঠে জাতির মনে।

আরো পড়ুনঃ বনলতা সেন কবিতার মূলভাব

বার বার ফিরে আসে কবিতার বিশেষ কিছু প্রশ্ন

প্রশ্ন: বার বার ফিরে আসে কবিতাটি কোন কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত?

উত্তর: বার বার ফিরে আসে কবিতাটি দুঃসময়ের মুখোমুখি কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত।

প্রশ্ন: বার বার ফিরে আসে কবিতার শেষ চরন কি?

উত্তর: বার বার ফিরে আসে কবিতার শেষ চরন হল “বাংলাদেশ শুধু এক সুবিশাল শহীদ মিনার হয়ে বাবে।”

Leave a Comment