মায়ের চিঠি একটি শিক্ষনীয় বাস্তব ঘটনা

বহর পুর গ্রামে আশিক নামের একটি ছেলে তার মায়ের সাথে থাকত। বাচ্ছাটি অনেক মিষ্টি ছিল। তার মায়ের একটি চোখ ছিল না যার কারণে তার মা দেখতে তেমন সুন্দরী ছিল না। যখন আশিক ছোট ছিল তার মাকে সে খুব ভালবাসত। কিন্তু যখন সে ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে সে অনুভব করে যে তার মায়ের একটি চোখ নেই যার কারণ তার মাকে  দেখতে  অনেক খারাপ লাগত। এইজন্য সে মানুষের কাছে যেতে লজ্জা পেত আর তার মায়ের সাথে কোথাও যেতে না।

মায়ের চিঠি একটি শিক্ষনীয় বাস্তব ঘটনা

ভাবত সে যদি তার মাকে নিয়ে আসে তার বন্ধুরা সাবাই তাকে খেপাবে। তার জন্য সে তার মাকে খারাপ খারাপ কথা বলতো। একদিন আশিক তার মাকে বলে তুমি আমার মা হতেই পারো না আমার সব বন্ধুদের মায়েরা কত সুন্দর। আর তুমি দেখতে অনেক খারাপ তোমাকে মা বলে পরিচয় দিতে আমার ভাল লাগে না। সময়ের সাথে সাথে আশিক তার মাকে অনেক আজে বাজে কথা বলতে শুরু করে। এই আজে বাজে কথে শুনে তার মা অনেক কষ্ট পেতে থেকে।

 এই কথা মনে করতো আর সব সময় তার মা কান্না করত। হঠাৎ একদিন আশিক টিফিন না নিয়ে ভার্সিটিতে চলে আসে।তার মা ভাবল ছেলে না খেয়ে থাকবে বরং আমি আমার ছেলের জন্য খাবার নিয়ে যায় ভার্সিটিতে। আশিকের মা টিফিন নিয়ে  চলে আসে হঠাৎ তার মাকে ভার্সিটিতে দেখি আশিক খুব রেগে যায়। তার মাকে ভার্সিটিতে যাওয়া দেকে তারপর সে তার বন্ধুদের সামনে বেশ লজ্জা আনুভব করে। 

তখন তার খুব রাগ হয় তারপর বাড়ি থেকে এসে মাকে বল্ল মা তোমাকে কত বার বলেছি না তুমি আমার ভার্সিটিতে যাবে না। তুমি কেন গিয়েছিলে ভার্সিটিতে ?  তোমার  জন্য আমার কত বেইজ্জতি হতে হল! সব বন্ধুরা আমাকে নিয়ে মজা করছিলো এর থেকে আমার না খেয়ে থাকা ভাল ছিল। এই কথা শুনে তার মা কাঁদে আর বলে আমায় মাফ করে দাউ আমি আর কখন তোমার বন্ধুদের সামনে আসবো না।এই কথা বলে আর কাদতে শুরু করে। এই কথা শোনার পর ও আশিকের মা তার সব সময় খেয়াল রাখে। আশিকের কোন জিনিসের আভাব রাখেনি।গরিব হওয়া স্বত্তেও।

এভাবে অনেক দিন চলে যায়। আশিক অনেক বড় হয়ে যায়। আর এখন আশিক তার মাকে বেশি অপমান করা শুরু করে। প্রতিটি সময় সে তার মাকে বেইজ্জতি করতো। সবার রাগ সে তার মায়ের উপরে ঝাড়তো বেচারি আশিকের মা সব কিছু নিরবে সহ্য করত।

একদিন হঠাৎ আশিক তার মাকে বলে তোমার সাথে আর থাকতে মন চাই না।এই আমি এখন চলে যাচ্ছি, এটা শুনে আশিকের মা বলে, বাবা তুমি এমনটা কর না। তুমি ছাড়া আমার আর কেউ নাই এই জগতে।এই কথা শুনে আশিক তার মাকে বলে তুমি অনেক খারাপ আর তুমি দেখতে অনেক বাজে। তোমার জন্য আমি আর বেইজ্জতি হতে পারবো না। তার মায়ের হাজার বারন এর পরেও সে চলে যায়।    

কিছুদিন পরে আশিক বিয়ে করে এবং তার বউয়ের সাথে থাকা শুরু করে। বেচারি মা একা একা অনেক কষ্ট করে জীবন কাটাতে থেকে। আশিকের মা এভাবেই অনেক দিন একা একা অনেক সংগ্রাম করে জীবন কাটাতে থেকে। ইতি মদ্ধে তার মা বৃদ্ধ হয়ে গেছে। এমনিভাবেই কিছুদিন যাওয়ার পরে একদিন আশিকের বাসায় ডাক পিয়ন একটি চিঠি নিয়ে হাজির হয়। 

আশিক দরজা খুলে দেখে, ডাক পিয়ন। পিয়ন বল্ল আপনি আশিক? আশিক বল্ল জি, তখন পিয়ন তার হাতে একটি চিঠি দিয়ে বল্ল এটা আপনার। চিঠিতে এমন লেখা ছিলো ” আশিক তুমি যখন এই চিঠি হাতে পাবে তখন আমি আর এই পৃথিবীতে হয়তো থাকবো না। আশিক একটু দুঃখী হয়ে যায় তারপর সে তার মায়ের চিঠিটি খুলে পড়াতে শুরু করে চিঠিতে লিখা ছিল বাবা আশিক আমার এক চোখ না থাকার কারণে তোমাকে অনেক বেইজ্জতি হতে হয়েছে। তাই আমি আসলেই অনেক দুঃখিত কিন্তু আজ আমি তোমায় একটা কথা বলছি যেটা আমি তোমাকে কখনই বলিনি। আশিক যখন তুমি অনেক ছোট ছিলে একদিন  তুমি বাইরে খেলাধুলা করছিলে এবং খেলতে খেলতে তুমি পড়ে যাও আর তাতেই তোমার চোখে অনেক ব্যথা পাও। আমি তোমাকে ডাক্তার এর কাছে নিয়ে যায়। তখন ডক্টর সাহেব বলে তোমার ছেলের একটি চোখ খারাপ হয়ে গেছে। তখন আমি অনেক হতাশ হয়র পড়ি। তখন ডাক্তার বলেন আপনার ছেলের চোখ ভাল হবে।আমি তখন ডাক্তার কে  বলি কি সেই কাজ যার কারনে আমার ছেলের দৃষ্টি শক্তি ফিরে পাবে? তখন ডাক্তার সাহেব বলেন কেউ যদি একটি চোখ আপনার ছেলেকে দেই তাহলেই আপনার ছেলে আবার দেখতে পাবে। আমি কোন সময় নষ্ট না করে তোমাকে একটি চোখ দিয়ে দিয়েছিলাম।কেননা তোমাকে যেন কোন দুঃখ কষ্ট না সয়তে হয় ।ঐদিন আমার একটি চোখ তোমাকে দিয়ে দেই আর সেই দিন থেকে আমার একটি চোখ নেই। ওই দিনের পর থেকে আমার চেহারা বাজে হতে  লাগল। মায়ের চিঠি

 বাবা আমি তোমাকে একটাই কথা বলতে চাই আর সেটা হল আমি দেখতে বাজে হতে পারে কিন্তু কখনো খারাপ হতে পারে না। আর আমার বিচানার নিচে দশ হাজার টাকা রাখা আছে আমার সারা জীবনের সঞ্চয় তুমি যখন বাড়ি থেকে চলে যাচ্ছিলে তখন তোমাকে দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু ভেবেছিলেম তুমি আমাকে ছাড়া থাকতে পারবে না। হয়তো দুই এক দিন পরে চলে আসবা কিন্তু তুমি আর আসো নি। ঔ টাকা গুলো নিও। আর একটা কথা আজ ( যেদিন চিঠি লিখছিলেন ) তোমাকে খুব দেখতে মন চাচ্ছে কিন্তু তোমার খোজ নিতে পারছি না । কারন আমি অনেক অসুস্থ মা শুধুই মা।  এই কথা বুঝতে পেরে আশিক খুব কান্না শুরু করে দেয় তার পাপের কোন সীমা ছিল না। তার মাকে দেখার খুব ইচ্ছা হচ্ছিল সে তার মায়ের কাছে মন থেকে মাফ চাইতে চেয়েছিল কিন্তু এখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল।

আরো পড়ুন: বার বার ফিরে আসে কবিতার মূলভাব

সে সারা জীবন এই কথাটা নিয়ে পস্থাতে থাকে। ইস যদি আমার মায়ের সাথে আমি একটি বার দেখা করতে পারতাম! এই কাহিনীটা থেকে এইটা শিখলাম যে দুনিয়াতে কিছুই দুইবার পাওয়া যায় কিন্তু মায়ের স্নেহ ও ভালোবাসা কখনোই পাওয়া যাবে না।মা যাই হোক মা। মা যেমনি হোক না কেন কখনই তুমি তোমার মায়ের কাছ থেকে দূরে সরে যেও না।

Leave a Comment